গ্রেফতারের তালিকায় সাবেক বর্তমান ৯৪ পুলিশ কর্মকর্তা
গ্রেফতারের তালিকায় সাবেক বর্তমান ৯৪ পুলিশ কর্মকর্তা
সাবেক দুই আইজিপি-একেএম শহীদুল হক এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ-আল-মামুনকে গ্রেফতারের পর বুধবার রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। পুলিশের বর্তমান ও সাবেক আরও অন্তত ৯২ কর্মকর্তার পরিণতি এ দুজনের মতো হতে পারে।
কারণ, তাদের বিরুদ্ধেও রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অসংখ্য মামলা হয়েছে। তারা ধাপে ধাপে গ্রেফতার হতে পারেন। এসবের মধ্যে ২৭৬টি মামলার পরিসংখ্যান যুগান্তরের হাতে এসেছে। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাবেক আইজিপি শহীদুল হকের নামে সাতটি ও চৌধুরী আবদুল্লাহ-আল-মামুনের নামে ৩৬টি মামলা আছে।
সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি (সাবেক এসবিপ্রধান) মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১১টি এবং সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা হয়েছে। সাবেক র্যাব ডিজি হারুন-অর-রশীদের নামে পাঁচটি এবং ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তারের নামে ছয়টি মামলা করা হয়েছে।
এছাড়া ডিএমপি ডিবির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ ৩৭, সাবেক যুগ্মকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার ২৭, এসএম মেহেদী হাসান আট এবং ওয়ারী বিভাগের সাবেক ডিসি ইকবাল হোসাইন আট মামলার আসামি। তারা সবাই গ্রেফতারের তালিকায় টপ লিস্টে আছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্রমতে, গ্রেফতারের তালিকায় আরও যারা টপ লিস্টে, তাদের মধ্যে আছেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক, সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া, সাবেক অতিরিক্ত আইজি লুৎফর কবির, জামিল আহম্মেদ, র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন,
ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, সিটিটিসির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান, সিটিটিসির যুগ্মকমিশনার কামরুজ্জামান, সাবেক ডিআইজি রিপন সরদার, অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জেয়াদ্দার, যুগ্মকমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মারুফ হোসেন সরদার, ডিএমপি ডিবির যুগ্মকমিশনার সঞ্জিত কুমার রায়, ডিএমপি ডিবি রমনা বিভাগের সাবেক ডিসি মোহাম্মদ আশরাফ ইমাম, সাবেক ডিসি (হেডকোয়ার্টার্স) তানভির সালেহীন ইমন, অতিরিক্ত ডিআইজি (সাবেক ডিবি ডিসি) মতিউর রহমান, ডিবির সাবেক ডিসি রাজিব আল মাসুদ, মাহফুজুল আল রাসেল, জাহিদুল তালুকদার, মতিঝিলের সাবেক ডিসি হায়াতুল ইসরাম, উত্তরার সাবেক ডিসি আশরাফুল আজিম, ডিসি এইচএম আজিমুল হক, হাফিজু আল ফারুক, মাহাবুব-উজ-জামান, জাফর হোসেন প্রমুখ।
অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) পদমর্যাদার যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার তথ্য পাওয়া গেছে তারা হলেন নুরুল আমিন, গোবিন্দ চন্দ্র, শাহেন শাহ, হাফিজ আল আসাদ, মুহিত কবির সেরনিয়াবাত, শহিদুল ইসলাম, জুয়েল রানা, হাসান আরাফাত, নাজমুল ইসলাম, সাব্বির রহমান, আফজাল হোসেন টুটুল, ফজলে এলাহী, রওশানুল হক সৈকত এবং শাকিল মোহাম্মদ শামীম। তাদের বেশির ভাগ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে।
গ্রেফতারের তালিকায় সহকারী কমিশনার (এসি) পদমর্যাদার যেসব কর্মকর্তার নাম আছে তারা হলেন-রেফাতুল ইসলাম রিফাত, শাহীনুর রহমান, শহীদুল হক, মিজানুর রহমান ও তানজিল আহমেদ গোলাম রুহানী। তালিকায় সাবেক যেসব ওসির নাম আছে তাদের মধ্যে আছেন আমিনুল ইসলাম, শাহীনুর রহমান শাহীন, খন্দকার হেলাল উদ্দিন, মাহাবুব রহমান, ফরমান আলী, মাহফুজুল হক ভূঁইয়া, শিকদার মো. শামীম হোসেন, সেলিমুজ্জামান, মাজহারুল ইসলাম, পলয় কুমার সাহা এবং আতিকুর রহমান মসিউর রহমান। আসামির তালিকায় বেশ কয়েকজন পুলিশ পরিদর্শকও আছেন।
তারা হলেন নাজমুল হাসান রণজিত রায়, মেহেদী হাসান, ফায়োত উদ্দিন রক্তিম, জাকির হোসেন, আতিকুল হক, রবিউল ইসলাম, মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন এবং আবুল বশার। এসআই পদমর্যাদার যেসব পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের মধ্যে বেশি মামলা অমিতাভ দর্জির বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা হয়েছে। এছাড়া গুলশান থানার এসআই মামুন মাতব্বরের বিরুদ্ধে তিনটি এবং শাহবাগ থানার এসআই আশরাফুল সিকদারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে।
একটি করে মামলা হয়েছে এসআই শাহাদাৎ আলী, কাউসার আহম্মদ খান, নূরে আলম মিয়া, মাসুম বিল্লাহ, মো. বশির, রাজিব চন্দ্র সরকার এবং মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে। রায়েরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় একটি এবং কোতোয়ালি থানায় কর্মরত তিন কনস্টেবলের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজি ও বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই ১১-১২টি মামলা হয়েছে। আমি যখন দেশে ছিলাম না, তখনও মামলা হয়েছে।
নোয়াখালীর একটি মামলায়ও আমাকে আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ১৩ থেকে ২০ জুলাই আমি বিদেশে ছিলাম। ওই সময়ের ঘটনায়ও আমাকে আসামি করা হয়েছে। আমি বুঝতে পারছি, আমাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতার করা হলে আমি বিষয়টি আইনগতভাবেই মোকাবিলা করব। পুলিশের অতিরিক্তি ডিআইজি ও ডিবির সাবেক ডিসি মশিউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, পেশাগত কাজের কারণেই মানুষ আমাকে বেশি চেনে। এ কারণে ডিবির যে কোনো ঘটনায়ই আমার নাম জড়িয়ে মামলা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ডিবিপ্রধান হিসাবে মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ যোগ দেওয়ার পর আমাকে মিডিয়ায় কথা বলতে বারণ করে দেওয়া হয়।
তার বিভিন্ন কাজে আমি প্রতিবাদ করতাম। এ কারণে তিনি আমাকে বিভিন্নভাবে পাহারা দিয়ে রাখতেন। তিনি বলেন, সবশেষ আমি ডিবির লালবাগ বিভাগের দায়িত্বে ছিলাম। ছাত্র-জনতার অন্দোলনের সময় ওই এলাকার চিত্র তুলনামূলক ভালো ছিল। তিনি বলেন, আমি কোটায় চাকরি নিইনি। এ কারণে আমি বরাবরই কোটা আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মাইনুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, একসময় মানুষ মনে করতেন, মামলা হলেই আসামি গ্রেফতার করতে হবে। এটা ঠিক না। তিনি বলেন, পুলিশের যেসব সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের সবাইকেই গ্রেফতার করা হবে, তা ঠিক না।
আমরা মামলার অভিযোগগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করছি। প্রাথমিক তদন্ত চালাচ্ছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যাবে, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
Comments
Post a Comment