Skip to main content

Featured Post

The officials of the administration cadre wanted the resignation of the commission chairman

কমিশন চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চাইলেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসনের ৫০ শতাংশ কোটা ইস্যুতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বাসা)।  বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইস্কাটনে বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে এ দাবি জানান বিসিএস ৯ম ব্যাচের কর্মকর্তা জাকির হোসেন কালাম।  তিনি বলেন, শুধু সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ করলেই হবে না, সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে এ সংস্কার কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে।  এর আগে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সোহেল রানা বলেন, উপসচিব পদে ৫০ শতাংশ হারে পদায়ন বৈষম্যমূলক, অযৌক্তিক ও ষড়যন্ত্রমূলক। রাষ্ট্রকে দুর্বল করার কোনো প্রচেষ্টা চলছে কি না, এটাও আমাদের দেখতে হবে।  এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী জানান, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ৫০ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করবেন তারা।  বর্তমান বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচি...

The victory of the students and the people, the farewell of Sheikh Hasina

 The victory of the students and the people, the farewell of Sheikh Hasina
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর লাখো মানুষ জড়ো হন সংসদ ভবন এলাকায়। তাঁদের কারও কারও হাতে ছিল জাতীয় পতাকা। গতকাল বিকেলে

ছাত্র ও জনতার ২৩ দিনের দেশ কাঁপানো আন্দোলনে পতন হলো আওয়ামী লীগ সরকারের। শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর বঙ্গভবন থেকেই হেলিকপ্টারে দেশ ছাড়েন। সে সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর বোন শেখ রেহানা। শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে তাঁর টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান হলো। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণের বিপুল সায় নিয়ে তিনি ক্ষমতায় বসেছিলেন। এরপর নিজের শাসনামলে আর কোনো গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন তিনি হতে দেননি।
শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ভোটাধিকার ও বাক্‌স্বাধীনতা হরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থ পাচার, দেশকে স্বজনতোষী পুঁজিবাদের কবলে ফেলা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা, ঋণের নামে ব্যাংক লুটের সুযোগ দেওয়া, আয়বৈষম্য চরম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াসহ বিস্তৃত অভিযোগ রয়েছে। 

এসবের বিপরীতে তিনি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতেন অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে। কিন্তু শেষ সময়ে অর্থনীতিকেও সরকার সংকটে ফেলেছিল। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ) কমে গেছে, খেলাপি ঋণ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে, দ্রব্যমূল্য সীমিত আয়ের মানুষের নাগাল ছাড়া হয়ে গেছে। দেশের মানুষের এসব সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের মন্ত্রীদের মুখে উপহাস শোনা যেত। কেউ কেউ বলতেন, দেশ সিঙ্গাপুর হয়ে গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সমাজের সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েই ছিল। সেটার বহিঃপ্রকাশ ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। উপলক্ষ তৈরি করে দেয় সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এর আগেও ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আন্দোলনে (২০১৫) যার লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলন লাগাতারভাবে শুরু হয় গত ১ জুলাই। 

১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার ‘রাজাকার’সংক্রান্ত এক বক্তব্য ও শিক্ষার্থীদের দাবিকে আইন-আদালতের চক্করে ফেলার পর তাঁর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যান শিক্ষার্থীরা। সেদিন রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী বেরিয়ে এসে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন, ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার।’বাংলাদেশে বিগত সাড়ে ১৫ বছরে শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস কেউ পায়নি। নিবর্তনমূলক আইন, গুম, গ্রেপ্তার, হয়রানি ও চাপের মুখে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম ছিল কোণঠাসা। এই প্রথম শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেলেন, স্লোগান দিলেন; শুরু হলো কোটা সংস্কার আন্দোলনের নতুন যাত্রা। 

The victory of the students and the people, the farewell of Sheikh Hasina
১৫ জুলাই শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের দিন ছাত্রলীগকে নামিয়ে দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। ওই দিন এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ স্লোগানের জবাব ছাত্রলীগই দেবে। তারা প্রস্তুত। এরপরই ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাপকভাবে হামলা চালায়। দফায় দফায় ছাত্রীদেরও ধরে ধরে পেটানো হয়। গুলি করা হয় শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে। 

১৭ জুলাই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে খুন করে পুলিশ। সেই ভিডিও চিত্রই কাজ করেছে বারুদে একটি দেশলাইয়ের কাঠির মতো। এরপর দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। স্লোগান দেওয়া হয় এই বলে যে ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি, গুলি কর।’ সত্যিই গুলি করা হবে, তা হয়তো ভাবতে পারেননি বিক্ষোভকারীরা। সাধারণ মানুষও ভাবতে পারেননি, কয়েক দিনেই ২০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে মেরে ফেলা হবে। কেউ হয়তো ভাবতে পারেননি, ঘরের মধ্যে থাকা শিশু, ছাদে থাকা কিশোরী, বারান্দায় থাকা মানুষ গুলিতে নিহত হবেন। যদিও ১৯ জুলাই কারফিউ জারি করার বিষয়টি জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘শুট অন সাইট’ বা দেখামাত্র গুলির নির্দেশ জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশে যা কখনো হয়নি, তা-ই হলো; বিপুল সংখ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থীদের গুলি করে মারা হলো, কলেজশিক্ষার্থীদের গুলি করে মারা হলো, স্কুলশিক্ষার্থীদের গুলি করে মারা হলো। মায়েরা কাঁদলেন, বাবারা কাঁদলেন, সহপাঠীরা কাঁদলেন। ক্ষোভে ফুঁসে উঠল দেশ। একে একে শিক্ষক, অভিভাবক, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সমর্থন জানাতে শুরু করলেন শিক্ষার্থী ও তরুণদের আন্দোলনে। শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা ৯ দফা দাবি জানিয়েছিলেন। সেই দাবি পূরণের বদলে বেছে নেওয়া হয় নির্যাতন ও গণগ্রেপ্তারের পুরোনো পথ, যা শেখ হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ১৫ বছর ধরে প্রয়োগ করেছেন। কয়েক দিনের মধ্যে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাদ যায়নি এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাও। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও নুসরাত তাবাসসুমকে তুলে নিয়ে আটকে রাখা হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কার্যালয়ে। সেখান থেকে জোর করে আন্দোলন প্রত্যাহারের ভিডিও বার্তা দেওয়ানো হয়। মানুষের প্রতিবাদ এবং সমন্বয়কদের অনশনের মুখে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ২ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে ৯ দফা দাবিকে এক দফায় রূপান্তর করা হয়। বলা হয়, সরকারকে পদত্যাগ করতেই হবে। ওদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে অস্বীকৃতি জানায়। পুলিশ আর গুলি করতে রাজি ছিল না। শেখ হাসিনা শেষ চেষ্টা হিসেবে নামিয়ে দেন তাঁর রাজনৈতিক শক্তিকে। ৪ আগস্ট ঢাকার রাস্তায় এবং দেশজুড়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করেন। তাঁদের কারও কারও হাতে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র, অনেকের হাতে ছিল দেশীয় অস্ত্র। ওই দিন সংঘর্ষে নিহত হন অন্তত ১১৪ জন মানুষ।যদিও ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে আওয়ামী লীগ বেশি সময় রাজপথে টিকতে পারেনি। ওই দিনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ‘মার্চ টু ঢাকা’ বা ঢাকামুখী গণযাত্রার ডাক দেওয়া হয়। গতকাল এই কর্মসূচির দিন সকালে কয়েকটি জায়গায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। দুপুর নাগাদ স্পষ্ট হয়ে যায় যে সরকার নড়বড়ে হয়ে গেছে। 

The victory of the students and the people, the farewell of Sheikh Hasina

বেলা আড়াইটায় হেলিকপ্টারে করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা, যিনি কদিন আগেই (১ আগস্ট) বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনা কখনো পালিয়ে যায় না।’ শেখ হাসিনা বঙ্গভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে তাঁর বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে উড্ডয়ন করেন। তিনি ভারতের আগরতলা হয়ে দিল্লি যান। সব মিলিয়ে ১৪ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনার মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ার পর ২৩ দিনে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তি পায় ‘অপশাসন’ থেকে। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার খবর শুনে যোগাযোগ করা হয় আওয়ামী লীগের এক শীর্ষস্থানীয় নেতার সঙ্গে। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, শেখ হাসিনা কারও কথা শোনেননি। তাঁর কারণেই রোববার আওয়ামী লীগকে মাঠে নামতে হয়েছে। নিহত হয়েছেন ১১৪ জন মানুষ। শেষ পর্যন্ত তিনি দলের নেতা-কর্মীদের চরম সংকটে রেখে বিদেশ চলে গেলেন। তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনার একগুঁয়েমি ও বারবার ভুল পদক্ষেপের ফলে আওয়ামী লীগ এখন অস্তিত্বের সংকটে। নেতা-কর্মীরা হত্যার ঝুঁকিতে। 

মিছিলে মিছিলে মুখর ঢাকা

বাংলাদেশে সোমবার ভোর হয়েছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে। সকালটা ছিল মেঘলা, রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। বেলা ১০টার পর থেকে যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, শহীদ মিনার, বাড্ডা, মিরপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারীদের জমায়েতের খবর আসতে শুরু করে। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও শুরু হয়। বেলা সোয়া একটার দিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন। তখনই মানুষ বুঝে যায়, পট বদলে যাচ্ছে। মানুষ একে একে ঘর থেকে বের হতে শুরু করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাস্তায় মানুষকে আর বাধা দেয়নি। বেলা আড়াইটায় শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবরের পর লাখো মানুষের মিছিল, স্লোগানে মুখর হয় ঢাকা। এ যেন শ্রাবণ মাসে ‘বসন্ত’। এই বসন্ত মানুষের মুক্তির, এই বসন্ত নতুন বাংলাদেশের। বিকেলের দিকে জনস্রোত গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে। সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। গণভবন থেকে যে যা পেরেছেন, তা নিয়ে গেছেন। এক ব্যক্তিকে দেখা যায় একটি বড় রুই মাছ নিয়ে যেতে। একজনের হাতে ছিল একটি টেলিভিশন ও একটি হাঁস। কেউ নিয়ে যাচ্ছিলেন মুরগি ও কবুতর। কেউ কেউ গণভবনের লেকে নেমে গোসল করছিলেন, কেউ কেউ মাছ ধরছিলেন। তাঁদের একজন নাহিদ জামাল। তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশে আর কোনো স্বৈরশাসক দেখতে চাই না।’ এদিকে গতকাল পুড়িয়ে দেওয়া হয় রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত বাসভবন সুধা সদন, তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা কার্যালয়, বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি। হামলা হয় জাতীয় সংসদে, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে। ছয় ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় বিমানবন্দরের কার্যক্রম। জেলায় জেলায় হামলা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও কার্যালয়ে। বিভিন্ন জায়গায় হামলা হয়েছে থানায়। ভাঙচুর করা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। বিকেল চারটার দিকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জনগণের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে কাজ পরিচালনা করব। ধৈর্য ধরেন, সময় দেন।’ তিনি সংঘাতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে সবাইকে শান্তিশৃঙ্খলার পথে ফিরে আসার আহ্বান জানান। ওদিকে বিকেলে বঙ্গভবনে বিভিন্ন দলের নেতাদের ডাকা হয়। সেখানে নতুন সরকার কীভাবে হবে, তার কাঠামো কী হবে, তা নিয়ে মতামত নেওয়া হয়।সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের প্রস্তাব দেবেন তাঁরা।


’৫২ থেকে ’২৪

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন বাংলাদেশের মানুষ ২০২৪-এর জুলাইয়ের মতো এত মৃত্যু দেখেনি। অতীতের আন্দোলনের মতো এবারের আন্দোলনেও সামনের সারিতে ছিলেন শিক্ষার্থীরা। এবারের বিশেষ দিক ছাত্রীদের, নারীদের বড় অংশগ্রহণ। আরেকটি দিক হলো, এবার লড়াই হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। বেশির ভাগ টেলিভিশন চ্যানেল যখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে, অনলাইন মাধ্যমগুলো চাপে, তখন শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ ও আন্দোলনের আদর্শিক লড়াইয়ের পথ হয়ে ওঠে ফেসবুক, টুইটার। সেখানে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ, স্বজন হারানোর বেদনা, পুলিশের গুলি করার ভিডিও চিত্র। তাতে যুক্ত করা ছিল মুক্তিযুদ্ধের গান, দেশপ্রেমের গান। নতুন নতুন স্লোগান, দেয়াললিখনও তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এবারের গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিল ‘জেনারেশন জেড’, যারা সংক্ষেপে ‘জেন জি’ নামে পরিচিত। তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ এই প্রজন্ম তাদের লড়াই তাদের মতো করে করেছে। তাদের ঠেকাতে বারবার ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে। কখনো কখনো ইন্টারনেট চালু থাকলেও বন্ধ রাখা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তবে শিক্ষার্থীদের দমানো যায়নি। বিস্ময়করভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন আক্রান্ত হলেন, তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এলেন। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, অতীতের আন্দোলনে সভা-সমিতির মাধ্যমে সংঘবোধ তৈরি হতো। নতুন প্রজন্ম সেটা তৈরি করেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মধ্য দিয়ে। মোটাদাগে দুটি বড় সমস্যায় তাঁরা ভুগছেন গুণমানসম্পন্ন শিক্ষা ও শোভন কর্মসংস্থানের অভাব। পাশাপাশি অনলাইন জগতে তাঁরা যেহেতু বিশ্বনাগরিক, সেহেতু তাঁরা আইনের শাসন, মানবাধিকার, ন্যায়বিচারের অভাব বোধ করেন। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘একজন সরকারপ্রধানের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মের সমস্যাগুলো মিটে যাবে বলে আমি মনে করি না। তাই নতুন সরকারকে তরুণদের প্রত্যাশাগুলো পূরণে কাজ করতে হবে।’


‘তাঁর দম্ভ দলটাকে ধ্বংস করল’

আওয়ামী লীগের বয়স ৭৫ বছর। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কে এম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। পরে বাদ দেওয়া হয় মুসলিম শব্দটি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিপথগামী কিছু সেনা কর্মকর্তার হাতে সপরিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হলে আওয়ামী লীগ অনেকটা ছন্নছাড়া হয়ে যায়। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছে; ক্ষমতায় এসে সেই আওয়ামী লীগই ২০১৪ সালের নির্বাচন করেছে বিরোধী দলের বর্জনের মুখে। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ ‘রাতের ভোট’ নামে পরিচিত পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির ভোটে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি ছিল না। আওয়ামী লীগ নিজেদের দলের লোকদেরই ‘ডামি’ প্রার্থী করে ভোটের আয়োজন করে। শেখ হাসিনা দলের ভেতরে নিজের ন্যূনতম বিরোধিতা এড়াতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করা নেতাদের কোণঠাসা করে রেখেছিলেন। সামনে এনেছিলেন অনুগত নেতাদের। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল আওয়ামী লীগ জনগণের কাছ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন; পুলিশ ও আমলানির্ভর, দুর্নীতিবাজে ঘেরা একটি দল। শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছিলেন, পরে তিনিই পরিচিত হন গণতন্ত্র হত্যাকারী হিসেবে। শেখ হাসিনা সারের জন্য কৃষক খুন নিয়ে সোচ্চার ছিলেন, তাঁর ওপর এখন ছাত্রহত্যার দায়। চার শতাধিক (৪৩৫) মানুষ হত্যার ঘটনার মধ্য দিয়ে তিনি বিদায় নিয়েছেন। গতকালই নিহত হয়েছেন অন্তত ১০৪ জন। শেখ হাসিনার বয়স এখন ৭৬ বছর। শেখ হাসিনা আর রাজনীতি করবেন না বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এরশাদের চেয়ে শেখ হাসিনা শত গুণ বেশি খারাপ হয়ে বিদায় নিয়েছেন। এরশাদ পালিয়ে যাননি, তিনি পালিয়ে গেছেন। তিনি পালিয়ে গেছেন, কিন্তু আওয়ামী লীগ দলটাকে ধ্বংস করে দিয়ে গেলেন। তাঁর হিংসা, দম্ভ, অহংকার দলটাকে ধ্বংস করল।


তারা কি ফিরিবে আজ

গণ-অভ্যুত্থান ঘটাতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত সাড়ে তিন শ মানুষ। আহত বহু। কারও পা কেটে ফেলতে হয়েছে। কারও চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, ফারহান ফাইয়াজ, নাইমা সুলতানারা আর ফিরবেন না। তাঁদের স্মরণে ‘ভাইরাল’ হয়েছে মোহিনী চৌধুরীর লেখা গান, মুক্তির মন্দির সোপানতলে।

Comments

Popular posts from this blog

India is on fire, 40,000 affected by heatstroke, 192 vagrants died in the summer in Delhi!

  দাবদাহে পুড়ছে ভারত, হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ৪০ হাজার, দিল্লিতে গরমে ১৯২ ভবঘুরের মৃত্যু! চলতি গ্রীষ্ম রেকর্ড গরমের সাক্ষী হয়েছে ভারত। দাবদাহের ভয়াবহতা চরমে পৌঁছেছে। দাউদাউ গরমে গত তিন দিনে কেবল দিল্লি, নয়ডাতেই ১৫ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।  এবার জানা গেল, গত সাড়ে তিন মাসে তপ্ত কড়াইয়ের ভারতে ৪০ হাজার মানুষ হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন!  অন্যদিকে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দাবি, ১১ থেকে ১৯ জুনের মধ্যে গরমে ১৯২ জন ভবঘুরের মৃত্যু হয়েছে রাজধানীতে।  এদিকে প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার সাক্ষী উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি। উত্তর ও মধ্য ভারত যখন বৃষ্টির অপেক্ষায় চাতক, তখন অসম-সহ একাধিক রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।  আবহ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এবার ভয়ংকরতম গ্রীষ্মের সাক্ষী গোটা এশিয়াই। ভারতের উত্তরাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে গড় তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রির আশপাশে থাকছে।  জলবায়ুর এই পরিবর্তনের জন্য দায়ী মানব সভ্যতা। আরও ভালো করে বললে ‘উন্নয়ন’। গত মার্চের পর থেকেই ক্রমশ অসহনীয় হয়েছে উঠেছে দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপামাত্রা।  সূর্যের লেলিহান উনুনে পুড়ে আকাশে উড়তে উড়তে বহু পাখির মৃত্যু হচ্...

আ.লীগই ক্ষমতায় আসছে: শেখ হাসিনা

আ.লীগই ক্ষমতায় আসছে: শেখ হাসিনা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট একেবারে দোড়গোড়ায়। বাকি আর মাত্র তিন দিন। দেশজুড়ে ভোটের উত্তেজনা। তবে এই উত্তেজনার মধ্যে নিশ্চিন্ত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে কলকাতার আনন্দবাজারকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, এবারও আওয়ামী লীগ জিতবে। বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে সুধাসদন ভবনে দেয়া ওই সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের জনগণের উপর আমার বিপুল আস্থা। তারা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। জনগনের ভোটেই আমরা আবার নির্বাচিত হব।’ এতটা নিশ্চিত কী ভাবে হচ্ছেন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রায় ৬০০ স্কুল পোড়ানোর কথা বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। মুছে যায়নি প্রিসাইডিং অফিসারসহ অজস্র নাগরিককে হত্যার স্মৃতি। রাস্তা কেটে মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সেই সময়ে জনগণই রুখে দাঁড়িয়েছিল। তারা ভোটও দিয়েছিল। সেই জনগণ আবার আমাদেরই ভোট দেবে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পরে দেশে একের পর এক সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সাধারণ মানুষ সে সব ভোলেনি। ভোলেনি বলেই ওই সব ঘটনা যে...

The Prime Minister handed over Ekushey Padak to 21 people

প্রধানমন্ত্রী একুশে পদক তুলে দিলেন ২১ জনের হাতে মহান একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ জনের হাতে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক তুলে দিয়েছেন।  মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তিরা এবং তাদের স্বজনদের হাতে একুশে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। এবার ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে মরণোত্তর একুশে পদক পেলেন দু’জন। এরা হলেন- মৌ. আশরাফুদ্দীন আহমদ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া (মরণোত্তর)  শিল্পকলার বিভিন্ন শ্রেণিতে ১১ জন পেলেন এই পদক।  সংগীতে পেলেন জালাল উদ্দীন খাঁ (মরণোত্তর), বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ, বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর) ও শুভ্র দেব।  অভিনয়ে অবদান রাখায় ডলি জহুর এবং এমএ আলমগীর, আবৃতিতে খান মো. মুস্তাফা ওয়ালীদ (শিমুল মুস্তাফা) এবং রূপা চক্রবর্তী, নৃত্যকলায় শিবলী মোহাম্মদ এবং চিত্রকলায় শাহজাহান আহমেদ বিকাশ।  মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিংয়ে কাওসার চৌধুরী, সমাজসেবায় মো. জিয়াউল হক ও আলহাজ...