রাজশাহীর চারঘাটে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে ভাসমান খাঁচায় মাছচাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। উপজেলার পদ্মা নদীতে মৎস্যচাষীরা দলবদ্ধভাবে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে উপযোগী আকারে খাঁচা স্থাপন করে বাণিজ্যিকভাবে মাছ উৎপাদন করছেন।
মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প, রাজশাহী বিভাগের সহায়তায় সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের টাঙ্গন গ্রামে পদ্মা নদীতে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেন একদল মৎস্যচাষী।
দশজন জেলের একটি সুফলভোগী দলকে এই প্রকল্পের আওতায় ১০টি খাচার জাল, দড়ি, বাশঁ, ড্রাম, জিআই পাইপ দিয়ে খাচা স্থাপনসহ পোনা ও খাদ্য ক্রয়ের জন্য প্রায় ৪ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওয়ালি উল্লাহ মোল্লাহ।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ভাসমান খাচাঁয় মাছ চাষ করলে পুকুর কিংবা দিঘির মতো বড় জলাশয়ের প্রয়োজন হয় না। প্রবাহমান নদীর পানিকে ব্যবহার করেও এ পদ্ধতিতে মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। মাছের বর্জ্য প্রবাহমান পানির সাথে অপসারিত হয় তাই পানি কিংবা পরিবেশের দুষণ হয় না।
নদীর পানি প্রবাহমান থাকায় প্রতিনিয়ত খাঁচার অভ্যন্তরের পানি পরিবর্তন হতে থাকে ফলে পুকুরের চেয়ে অধিক ঘনত্বে মাছ চাষ করা যায়। নতুন উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তার পাশাপাশি পুকুর খননের হাত থেকে উপজেলার কৃষি জমিগুলো রক্ষা পাবে বলে জানান ইউসুফপুর ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম মাখন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইউসুফপুর ইউনিয়নের টাঙ্গন গ্রাম পূর্বপাড়া সংলগ্ন পদ্মা নদীতে স্থাপিত ১০ জনের একদল মৎস্যচাষী সমবায় ভিত্তিতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করছেন। পদ্মানদীর প্রায় ২শ বর্গফুট এলাকায় ১০টি ভাসমান খাঁচায় মানসম্মত তেলাপিয়া প্রজাতির মাছ চাষ করছেন। ১০টি খাঁচায় ইতোমধ্যে কেজিপ্রতি ৬০ পিস হিসেবে ১০ হাজার মাছের পোনা ছাড়া হয়েছে। বর্তমানে একেকটি মাছের ওজন প্রায় দুইশো গ্রাম।
আগামী এক মাসের মধ্যে একেকটি মাছের ওজন প্রায় ৩০০-৪০০ গ্রাম হবে এবং উৎপাদিত মাছের বাজার মূল্য প্রায় ৫ লক্ষ টাকার সমান হবে বলে জানিয়েছেন টাঙ্গন মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি কামরুল ইসলাম ও সদস্য শামীম ।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার ওয়ালিউল্লাহ মোল্লাহ জানান, আমাদের দেশে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষের ইতিহাস অনেক পুরানো। উপজেলার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর কিছু কিছু অংশে সারা বছর খাঁচায় মাছ চাষ করে মাছের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
নদীর কিনারায় বসবাসরত মৎস্যচাষীদের সংগঠিত করে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর সাথে সাথে খাঁচায় উৎপাদিত মানসম্পন্ন তেলাপিয়া রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
Comments
Post a Comment