বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যত বড় ভূমিকম্প : বাংলাদেশে ও এর আশপাশের অঞ্চলে ভূমিকম্প নতুন কিছু না হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব ভূমিকম্প নিয়ে সঠিক তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় না। এছাড়া ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছিল তা বিভিন্ন নথিতে উল্লেখ পাওয়া গেলেও সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মেলে কম।
বাংলাদেশের সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় ১৫৪৮, ১৬৪২, ১৬৬৩, ১৭৬২, ১৭৬৫, ১৮১২, ১৮৬৫, ১৮৬৯ সালে ভূমিকম্প হওয়ার ঐতিহাসিক উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে এসবের মাত্রা কত ছিল তা জানা যায় না। এছাড়া ১৮২২ ও ১৮১৮ সালে সিলেট ও শ্রীমঙ্গলে ৭.৫ ও ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। তবে এর ক্ষয়ক্ষতির তেমন বর্ণনা পাওয়া যায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ড. মো. আনোয়ার হোসেন ভূঁঞা বলেন, বাংলাদেশে গত ১২০-২৫ মাঝারি ও বড় মাত্রার প্রায় শতাধিক ভূকম্প অনুভূত হয়েছে।
তবে এসবের মধ্যে সাত বা তার চেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের সংখ্যা খুব বেশি নয়। মি. ভূঁঞা বলেন, বাংলাদেশ ভূমিকম্প-প্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত এবং এর নিচে যে পরিমাণ শক্তি জমা হয়ে আছে তা বের হলে বাংলাদেশে বেশ বড় ধরণের ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ ও এর আশপাশের অঞ্চলে এ পর্যন্ত যেসব বড় ভূমিকম্পের উল্লেখ পাওয়া যায় সেগুলো হচ্ছে:
১৫৪৮ সালের ভূমিকম্প : ঐ বছর সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল আসামে। এই ভূমিকম্প এই অঞ্চলের ভূমিকম্পে বড় ধরণের পরিবর্তন এনেছিল বলে জানান ভূতত্ত্ববিদ ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার। তবে কী ধরণের পরিবর্তন হয়েছিল তার বিস্তারিত জানা যায় না। এর ১০০ বছর পর আপার আসামে আরেকটি বড় ভূমিকম্প হয়।
১৭৬২ সালের ভূমিকম্প : টেকনাফ থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত প্রায় ৪০০ কিলোমিটার জায়গায় যে ফল্ট লাইন রয়েছে সেখানে ৮.৫ মাত্রার বেশি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়। এর ফলে সেন্টমার্টিন আইল্যান্ড তিন মিটার উপরে উঠে আসে। এর আগে সেন্টমার্টিন আইল্যান্ড ছিল ডুবন্ত দ্বীপ।মিয়ানমারের একটি দ্বীপ ছয় মিটার ওপরে উঠে আসে।
একই ভূমিকম্পে সীতাকুন্ড পাহাড়ে কঠিন শিলা ভেদ করে নিচ থেকে কাদা বালুর উদগীরণ হয়। এই ভূমিকম্পের কারণে বঙ্গোপসাগরে সুনামি হয়। এই সুনামির কারণে ঢাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর ধারে বাড়িঘর ভেসে গিয়ে সে সময় ৫০০ মানুষের প্রাণহানি হয়।
১৭৮৭ সালের ভূমিকম্প : শিলং প্ল্যাটুতে গত ৪০০ বছরে অসংখ্য আট মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছি। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ১৯৮৭ সালের ভূমিকম্প। এটি ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পাল্টে দিয়েছিল বলে জানান মি. আখতার।
এটি আগে ময়মনসিংহ দিয়ে প্রবাহিত হতো, কিন্তু বর্তমানে এটি যমুনা নদীর কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
১৮৮৫ সালের ভূমিকম্প : মধুপুর ফল্টে ভূমিকম্প হয় ১৮৮৫ সালে। এটি বেঙ্গল ভূমিকম্প নামে পরিচিত। এটির উৎপত্তিস্থল ছিল মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায়। ধারণা করা হয় যে, এর মাত্রা ছিল ৬.৫- ৭.০। এটি এতো শক্তিশালী ছিল যে ভারতের সিকিম, বিহার, মনিপুর এবং মিয়ানমারে অনুভূত হয়েছিল।
ঢাকা, বগুড়া, ময়মনসিংহ, শেরপুর এবং পাবনায় প্রাণহানির খবর পাওয়া গিয়েছিল। এই ভূমিকম্পটি আঘাত হানার আগে একই বছরের জুনে আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে যা কলকতা এবং দার্জিলিংয়েও অনুভূত হয়েছিল। ভূতত্ত্বদিব মি. আখতার বলেন, সেই সময়ে জনসংখ্যা কম ছিল, এবং এই অঞ্চলের গুরুত্ব কম ছিল বলে ক্ষয়ক্ষতির সেভাবে পাওয়া যায় না।
১৮৮৯ সালের ভূমিকম্প : ১৮৮৯ সালের ১০ই জানুয়ারি এই ভূমিকম্পটি মেঘালয়ে আঘাত হানে। এই ভূমিকম্পটি সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না। তবে এর কেন্দ্রস্থল ছিল ভারতের মেঘালয়ের জৈন্তা পাহাড়। এর মাত্রা ছিল ৭.৫। সিলেট শহর এবং আশপাশের এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়েছিল।
১৮৯৭ সালের ভূমিকম্প : ১৮৯৭ সালের ১২ই জুন এটি শিলং প্ল্যাটুতে আঘাত হানে। এই ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৮.২। এটা গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়েক নামে পরিচিত। এটার ঝাঁকুনি দিল্লি, পেশোয়ার পর্যন্ত অনুভূত হয়েছিল। এই ভূমিকম্পে মেঘালয়, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকায় ১৬শর বেশি মানুষ মারা যায়। ভূতত্ত্বদিব মি. আখতার বলেন, এই ভূমিকম্পের পর ইংরেজরা ভয়ে তাবু টাঙিয়ে বসবাস শুরু করেছিল।
এছাড়া অনেকে নৌকাতেও বাস করেছেন কয়েক মাস। ড. আনোয়ার হোসেন ভূঁঞা বলেন, লিখিত আছে যে, হাছন রাজার একটি পোষা হাতি ছিল যেটি ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট একটি ফাটলে পরে মারা যায়। এঘটনার পর হাছন রাজা মর্মাহত হন এবং তিনি এর পরে মরমী কবি হয়ে উঠেন।
১৯৫০ সালের ভূমিকম্প : এই বছর ভারতের অরুণাচল প্রদেশে ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, এর পরে যে বন্যা হয় সেখান থেকে গাছপালা ও পলি বাংলাদেশে চলে আসে। এই ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিশমি পাহাড়। এতে ভারতের প্রায় চার হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল।
এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছিল। কম্পন অনুভূত হয়েছিল বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং চীনের কিছু অংশে। তবে এসব এলাকায় তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এছাড়া ১৯৩৪ সালের দিকে বিহার ভূমিকম্প সংগঠিত হয় যার ক্ষতিকর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছিল বলে জানান মি. হোসেন। তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা
Comments
Post a Comment