অবশেষে তাপদাহের অবসান হলো। রাজশাহীতে ঝরলো প্রত্যাশিত বৃষ্টি। প্রাণ-প্রকৃতিতে ফিরলো সজীবতা। পবিত্র রমজানে ৪২ ডিগ্রির কাঠফাঁটা রোদ ও আগুন ঝলসানো তাপদাহে ওষ্ঠাগত হওয়া জনজীবনে স্বস্তি ফিরলো।
সোমবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরের পর থেকেই আকাশে মেঘের খেলা শুরু হয়। আকাশ ক্রমশই অন্ধকার হতে থাকে। বিকেল পৌনে ৫টার পর বইতে শুরু করে হাল্কা ঝড় বাতাস। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে চলে ধুলো ঝড়ের খেলা।
এরপরই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি নামে। কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে তা রূপ নেয় মুসলধারে। এরপর সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত টানা মুসলধারে বৃষ্টি হয়। এরপর আবারও বিরতি দিয়ে দিয়ে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি চলে সারারাত। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, রাজশাহীতে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। আর সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরআগে সর্বশেষ ৩ এপ্রিল ৩ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিলো।
আর তার আগে ২ এপ্রিল ৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এরপর চৈত্রের কড়া রোদ ও আগুন ঝরা তাপদাহ শুরু হয়। চলে টানা ২০ দিন। স্বস্তির এই বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় ছিলেন এ অঞ্চলের মানুষ। বিশেষ করে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ, আমচাষী ও বোরো ধান চাষীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন।
তপ্ত কড়া আবহওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে রাজশাহীতে সম্মিলিতভাবে ‘সালাতুল ইস্তিসকা’র নামাজও আদায় করা হয়েছিলো। তীব্র এই তাপদাহে ঝরছিলো আমের গুটি। শুকিয়ে চৌচির হচ্ছিলো বোরো ধানের খেত। খেতে সেচের পানি না পেয়ে আদিবাসী কৃষকের আত্মহত্যা চেষ্টার ঘটনাও ঘটেছিলো। অবশেষ আর্শীবাদের বৃষ্টিতে প্রাণ-প্রকৃতিতে হাসি ফিরছে।
রাজশাহীর মোহনপুর খাসিগ্রাম ইঊনিয়নের বেলদা গ্রামের কৃষক আসাদুল ইসলাম জানান, এই বৃষ্টিতে যেসব বোরো জমিতে ধান কাটা হচ্ছে সেখানে কিছুটা ক্ষতি হবে। তবে তার ধান এখনো পাকে নি। ধানের জন্য আর্শীবাদই। দু’দিন পর আরেকবার বৃষ্টি হলে আরও ভালো হয়।
পবা উপজেলার দামকুড়ার আমচাষী সাবিয়ার জানান, তার প্রায় ২০ টির মতো আম গাছ আছে। কড়া রোদের কারণে গুটিগুলো ঝরে পড়ছিলো। গাছের নিচে পানি দিয়েও খুব একটা উপকার হয় নি। তবে আকাশের বৃষ্টিতে ভালোই হবে। এই বৃষ্টিটা খুবই দরকার ছিলো।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জৈষ্ঠ্য পর্যবেক্ষক রাজিব খান জানান, ইদের একদিন আগে থেকে তাপমাত্রা কিছুটা কম। এরআগে গত দু’দিন ধরে রাজশাহীর আকাশ মেঘলা ছিলো। ইদের দিন সকালে দু’এক ফোঁটা বৃষ্টি ঝরলেও মুসলধারে বৃষ্টির দেখা মেলে নি। সোমবার বিকেল থেকে হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, গত ২০ তারিখের পর বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা তারা বলেছিলেন। ২৪ তারিখে সেই প্রত্যাশিত বৃষ্টির দেখা মিললো। এদিকে, রাজশাহীতে চলতি মাসের শুরু থেকেই তাপদাহ শুরু হয়। গত ১৩ এপ্রিল থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ শরু হয়। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ ৪২ এর ঘরেই ছিলো। একইসঙ্গে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদও ছিলো উর্ধ্বমুখি। গত ১৫ এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামে নি।
এতে দিনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় আগুন ঝরা গরম এবং রাতে ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ ছিলো জনজীবন। আর এই দুর্ভোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলো লোডশেডিং। যা কষ্টের মাত্রা আরও বাড়িয়েছিলো। আর মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিলো গত ১৭ এপ্রিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এই বৃষ্টি আমের গুটি ও বোরো ধানের জন্য আর্শীবাদই নয়; বরং রক্ষাকবজও বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা। রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ জানান, এই বৃষ্টি কৃষকদের অনেক প্রত্যাশিত ছিলো। দীর্ঘ সময় বৃষ্টি না হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষিতে কিছু সমস্যাও তৈরি হয়েছিলো।
আমের গুটি ঝরে পড়ছিলো। এই বৃষ্টি আম ও বোরো ধানের জন্য বেশি উপকারী। এছাড়া অন্যান্য সকল ফল-ফসলের জন্যই উপকারী।
Comments
Post a Comment