৩৪ হাজার বইয়ের পাঠক মাত্র ২৮ জন
বই রাখার সারি সারি তাক। সবগুলোতে থরে থরে বই সাজানো। আছে সোফাসহ কাঠের চেয়ার-টেবিল। আছে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিক পাখা। পরিবেশও পাঠের উপযোগী। কিন্তু একটি সমৃদ্ধ পাঠাগারে যাদের জন্য এই আয়োজন, নেই শুধু সেই পাঠক।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
পাঠাগারটিতে ৩৪ হাজারেরও বেশি বই থাকলেও পাঠকসংখ্যা দৈনিক সর্বোচ্চ ২৮ জন। এদের অধিকাংশই আসেন পত্রিকা পড়তে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এক যুগে পাঠাগারটির সদস্য বাড়েনি আশানুরুপ। চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত সদস্যসংখ্যা মাত্র ১৩১ জন। পাঠক বলছেন, পাঠাগারে চাকরি প্রত্যাশীদের বইয়ের সংকট রয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও এক-দুজনের বেশি ব্যবহার করতে পারেন না। তবে দায়িত্বশীলরা জানান, জনবল সংকটের কারণে পাঠাগারটি ভালোভাবে চালানো যাচ্ছে না। ফলে এর সুফল পুরোপুরি পাচ্ছেন না পাঠক। ২০১১ সালে চালু হয় জেলার এই গণগ্রন্থাগার। ৩৪ হাজারেরও বেশি বই আছে এখানে। একসঙ্গে বসতে পারেন প্রায় ৭০ জন পাঠক। রাখা হয় ১২টি সংবাদপত্র। তবে এতো বড় একটি পাঠাগারে জনবল ৮ জনের বিপরীতে রয়েছে মাত্র দুজন। গ্রন্থাগারিকের মতো প্রধান পদও শূন্য অনেকদিন। গত বুধবার সরকারি এই গ্রন্থাগারে ঢুকতেই চোখে পড়ে রেজিস্ট্রি খাতা। খাতায় সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত পাঠকের স্বাক্ষর রয়েছে ১২ থেকে ২৮ জনের। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো এই স্বাক্ষরকারীরাই মূলত প্রতিদিন আসেন। তারা চাকরিপ্রত্যাশী অথবা শুধু সংবাদপত্র পড়তে আসেন। পাঠাগারে নারী ও শিশুদের পড়ার ব্যবস্থা থাকলেও গত মার্চ মাসে নারী পাঠক এসেছেন হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন। স্থানীয় মাইনুল ইসলামসহ আরও একজন চাকরিপ্রত্যাশী রাইজিংবিডিকে জানান, পাঠাগারে চাকরির প্রস্তুতিমূলক বইয়ের সংকটের কথা। তারা এ ধরনের বই আরো বাড়ানোর দাবি জানান। এ বিষয়ে একাধিকবার বলা হলেও পাঠাগার কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নেয়নি বলেও তাদের অভিযোগ। এ ছাড়া পাঠাগারে ইন্টারনেট কর্নার থাকলেও একজনের বেশি ব্যবহার করতে পারেন না বলে জানান তারা। মইন হাসান নামে আরেক পাঠক বলেন, এই পাঠাগারে জব প্রিপারেশনের জন্য পাঠক আসে। বিশ্ব জানার জন্য যে বইগুলো আছে, সেগুলো পড়ার জন্য পাঠক আসে না। পাঠাগারে পাঠক ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি উল্লেখ করে মইন বলেন, পাঠাগারের পক্ষ থেকে স্কুলে স্কুলে গিয়ে বলে আসলে পাঠকের সংখ্যা বাড়তে পারে।
পাঠাগারের সহকারী গ্রন্থাগারিক গোলাম মোস্তফা বলেন, ৩৪ হাজার বই থাকলেও পাঠকের সংখ্যা একেবারেই কম। আমরাও লোকবল সংকটের কারণে পরিপূর্ণ সেবা দিতে পারি না। নতুন পাঠকের উপস্থিতি নেই বললেই চলে।
Comments
Post a Comment