বঙ্গবন্ধু টানেলের একটি টিউব প্রস্তুত, শনিবার ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
বহুল প্রতিক্ষীত চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে’র একটি টিউব প্রস্তুত হয়েছে। ৩.২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ টানেলই নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার সর্বপ্রথম টানেল। সেটির দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজ শেষ এবং উত্তর টিউবের ৯৯ শতাংশ কাজও শেষ হয়েছে। আর শনিবার (২৬ নভেম্বর) টানেলের ‘দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজ সমাপ্তির উদযাপন’ অনুষ্ঠান করবে টানেল কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত থেকে এটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংশ্লিষ্টরা।কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ নিউজনাউকে বলেন, ‘কর্ণফুলী টানেলের দক্ষিণ টিউবের কাজ শেষ হয়েছে। প্রথম টিউবের কাজের সমাপ্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে টিউব উদ্বোধন করবেন। পাশাপাশি টানেলস্থলেও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে চট্টগ্রামের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর টানেল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে যান চলাচল শুরু হলে দেশের সামগ্রিক আর্থসামাজিক অগ্রগতিতে মাইল ফলক হয়ে থাকবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। শনিবার ২৬ দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজ সমাপ্তির আনুষ্ঠানিকতা নিয়েও পুরো এলাকায় বইছে আনন্দের হওয়া। টানেলে আগামী জানুয়ারি থেকে যান চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের চূড়ান্ত মাইলফলক কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। প্রধানমন্ত্রী ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছেন। সেখানে দেশীয় বিনিয়োগ আছে, বিদেশি বিনিয়োগও আছে। দেশীয় উৎপাদন বাংলাদেশ সর্বত্র ছড়িয়ে যাবে, ঠিক বিদেশেও ছড়িয়ে যাবে। সেজন্য দরকার হচ্ছে আমাদের রাস্তাঘাট, ব্রিজ এবং বন্দর। মাতারবাড়ির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক আছে। এ টানেলের কারণে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে যাওয়ার ৪০ কিলোমিটার রাস্তা কমে যাবে। সময় বাঁচবে, যোগাযোগ দ্রুত হবে। যারা কাজ করে তাদের সময় বাঁচা মানে খরচ কমে যাওয়া। এই টানেল বাংলাদেশের বিশাল অর্জন। দেশের প্রথম এই টানেল নির্মিত হচ্ছে চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায়। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই মেগা প্রকল্প। এখন চলছে টানেলের ভেতরে ফায়ার ফাইটিং, লাইটিং ও কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনার কাজ। পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে প্রকল্পের গাড়িও। নদীর তলদেশে হওয়ায় যেকোনও সময় পানি জমতে পারে আশঙ্কায় টানেলের মধ্যে বসানো হচ্ছে ৫২টি সেচ পাম্প। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। টানেলে নদীর তলদেশে স্থাপন করা হয়েছে দুটি টিউব। একটি টিউবে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে বিকল্প পথে গাড়ি চালানো যায়, সেটিরও কাজ চলছে। বাতি ও পাম্প স্থাপন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরির কাজও সমানতালে চলছে। নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক, ৭৭২ মিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার। এখন চলছে কর্ণফুলীর দক্ষিণ প্রান্তে আনোয়ারা অংশে টোল প্লাজা নির্মাণের কাজ। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, টানেল চালু হলে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এক ধাপ এগিয়ে যাবে। টানেলকে ঘিরে রাজধানী ঢাকার সাথে চট্টগ্রাম নগরের এবং পর্যটন নগর কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। ইতোমধ্যে আনোয়ারা উপজেলা প্রান্তে সংযোগ সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠছে ছোট-বড় অসংখ্য শিল্প-কারখানা। টানেলকে ঘিরে পর্যটন, শিল্পায়নসহ অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে নতুন মাত্রা। টানেল চালু হলে কর্ণফুলী নদী পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র ৪ থেকে ৫ মিনিট। সময় বেঁচে যাওয়ায় অর্থনীতি গতি পাবে। জানা গেছে, এ টানেলটি ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে। দুই টিউব সংবলিত মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউজনাউ/এসএইচ/২০২২
JOy bangla Joy Bangobandhu
ReplyDelete