ডিসেম্বরে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের মতো বিরোধীদের বোমা হামলা
সামনে রেখে ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রাজনীতি। বিরোধী দল বিএনপির নেতারা হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘১০ ডিসেম্বরের পর দেশ চলবে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে’। তাদের এই হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, ‘ডিসেম্বরে বিএনপিকে মাঠে নামতে দেওয়া হবে না’। বাংলাদেশের মতো রাজনীতিতে এই ডিসেম্বরের হাওয়া লেগেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও। ২০২৩ সালে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ডিসেম্বরের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসকে। চলতি মাসে বড় কিছু ঘটার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। কিন্তু কী হতে চলেছে ডিসেম্বরে, তা খোলাসা করেননি এ বিজেপি নেতা। গণমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ১৩, ১৪ ও ২১ ডিসেম্বর- এই তিন দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি আরও বলেন, ‘অপেক্ষা করুন দেখার জন্য।’ বিরোধীদের এমন কথায় গুঞ্জন শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে। তাহলে কি অকালে তৃণমূল সরকার পতনের ইঙ্গিত দিলেন বিরোধী দলনেতা? ডিসেম্বরে কি বড়সড় কোনো রাজনৈতিক চমক আসবে? নাকি এসব নিছকই রাজনৈতিক কৌশল? কয়েক মাস ধরেই বারবার ডিসেম্বরের ডেডলাইনের কথা শোনা যাচ্ছে রাজ্য বিজেপি নেতাদের মুখে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজ্যজুড়ে বোমা, গুলি, সন্ত্রাস, সহিংসতা, মৃত্যুর ঘটনা ও দলীয় কোন্দল বাড়ছে। উঠেছে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগও। দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে কারাবন্দি রয়েছেন রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলার সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলসহ আরও কয়েকজন নেতা-কর্মী। স্বভাবতই এতে অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। গত ৩ ডিসেম্বর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংসদীয় কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে অনুষ্ঠিত এক সভায় বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বলতে শোনা গেছে, ‘চলতি মাসেই আবার আসবো আপনাদের এখানে। এক গাড়ি লাড্ডু নিয়ে আসবো। কারণ বলছি না। কিন্তু এ মাসের শেষেই আসবো। বিজয় দিবস পালন করবো। আপনারা সবাই তৈরি থাকুন।’ শুভেন্দুর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘এই যে ডিসেম্বর ধামাকা, ওরা বলছে সরকার পড়ে যাবে। আপনি কি জানেন, আমি যদি দরজা খুলে দেই তাহলে বাংলায় বিজেপি বলে কোনো দল থাকবে না।’ দিলীপ ঘোষের মুখেও শোনা গেছে ডিসেম্বরের কথা। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি বলেছেন, ‘ভোট এখন নেই, কিন্তু ডিসেম্বরের পরে হতে পারে।’ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কয়েকদিন আগে বলেছেন, ‘সময় আসুক, ডিসেম্বরে বুঝতে পারবেন। যত শীত পড়বে, সরকার তত কাঁপবে।’ তবে বিরোধী দলের নেতাদের ‘ডিসেম্বর ধামাকা’ মন্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল কংগ্রেস। দলটির রাজ্যসভার সদ্য সুখেন্দু শেখর রায় বলেছেন, ‘আসলে ওদের দলের লোকেরাই যারা সরকারে আছে, তারা তাদের রাজ্যের নেতাদের কিছু খবর দিচ্ছে যে, অমুক দিন সিবিআই অভিযানে যাবে, তমুক দিন ইডি যাবে। সিবিআই, ইডি বা অন্য তদন্তকারী সংস্থাগুলো এবং বাংলার বিজেপি সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। দল আর সরকার বলে আলাদা কিছু নেই।’ তাছাড়া বিরোধীদের এই ডিসেম্বর ধামাকা নিয়েই গত মাসে একটি সভা থেকে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গার আশঙ্কাপ্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। ওই সভায় উপস্থিত রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্যকে উদ্দেশ্য করে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেছিলেন, ‘কমিউনাল পকেটগুলো এখন থেকে দেখে রাখুন। কেউ কেউ পরিকল্পনা করছে ডিসেম্বর ধামাকা অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক যুদ্ধ লাগাতে পারে।’ যদিও এসবই অনুমান, আশঙ্কার কথা। বিশেষ করে, শুভেন্দুর বেঁধে দেওয়া ওই তিন দিনে বিশেষ কী ঘটতে চলেছে তা নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও। তবে কি নিছকই রাজনৈতিক কৌশল নাকি এর পেছনে সত্যি কোনো অন্তর্নিহিত অর্থ রয়েছে- তা সময়ই বলতে পারে। তথ্যসূত্র: জাগোনিউজ
Comments
Post a Comment