Skip to main content

Featured Post

The officials of the administration cadre wanted the resignation of the commission chairman

কমিশন চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চাইলেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসনের ৫০ শতাংশ কোটা ইস্যুতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বাসা)।  বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইস্কাটনে বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে এ দাবি জানান বিসিএস ৯ম ব্যাচের কর্মকর্তা জাকির হোসেন কালাম।  তিনি বলেন, শুধু সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ করলেই হবে না, সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে এ সংস্কার কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে।  এর আগে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সোহেল রানা বলেন, উপসচিব পদে ৫০ শতাংশ হারে পদায়ন বৈষম্যমূলক, অযৌক্তিক ও ষড়যন্ত্রমূলক। রাষ্ট্রকে দুর্বল করার কোনো প্রচেষ্টা চলছে কি না, এটাও আমাদের দেখতে হবে।  এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী জানান, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ৫০ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করবেন তারা।  বর্তমান বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচি...

গল্প

গল্প

দীননাথ কবিরাজ 
রেজা নুর
দীননাথ নাড়ি দেখে বলে দিতে পারেন রোগটা কী। বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল আর উপরের চার আঙুলের মাঝখানে সাপের হা করা মুখের মতো ভঙ্গি ক’রে আলতো কবজি ছুঁয়ে মিনিট খানেক চোখ বুঁজে থাকেন। রোগগুলো সিনেমার পর্দার মতো ভেসে ওঠে। ছেড়ে দিলেও হাত সরিয়ে নেয় না রোগিরা। আরও কিছুক্ষণ হাত বাড়িয়ে বসে থাকে। কবিরাজ বাবু যদি তাঁর হাতখানা রেখে দিতেন অনন্তকাল এই হাতের পরে! রোজকার মতো আজও কবিরাজ বাবু খুব ভোরে উঠেছেন। পূজাপাঠ সেরে হাঁটতে বেরিয়েছেন একটু। দীঘড়ি গ্রামটা অন্যান্য গ্রামাঞ্চল থেকে খুব একটা আলাদা নয়। মাঠ, গাছপালা, পুকুর, কাঁচা রাস্তা আর বাঁশঝাড়ের মধ্য দিয়ে ঝনঝনে পায়ে চলা পথ। সেই পথ গিয়ে শেষ হয়েছে পুকুর ঘাটে। দীঘির মতো বড়ো এই পুকুর। এক পাড় থেকে অন্যপাড়ের গাছগুলোকে ছোট মনে হয়। একটু পর পর নারকেল গাছ লাগানো সারি সারি। তাদের মাঝখানে সরু-কোমর কিশোরের মতো ঝাঁকড়াচুল দুলিয়ে দাঁড়ানো সুপুরিগাছ। বাড়ীর পাশেই এতবড়ো পুকুরটা কেটেছিলেন দীননাথের বাবা সতিনাথ। দীননাথ তখন নাইনে পড়েন। স্কুল থেকে এসে দেখতেন শত শত মানুষ মাথায় কঞ্চির ডালায় মাটি বয়ে নিয়ে যাচ্ছে উপরে। পিঁপড়ের সারি যেনো। কত রঙের মাটি যে ছড়ানো। যতই গভীরে যাচ্ছে গর্ত, ততই মাটির ভাঁজ বেরিয়ে আসছে। স্ত্রী করা কাপড়ের মতো মাটির পরতে পরতে ছড়ানো নানারঙ। দেখতে দেখতে চারদিকটা উঁচু হয়ে উঠতে লাগলো। ছোট গর্তটা চওড়া হয়ে পুকুর হয়ে উঠলো। কেটে কেটে মাটির সিঁড়ি বানানো। সেই সিঁড়ি দিয়ে টলে টলে একে বারে নিচে নেমে গিয়েছিল দীননাথ। কোনো কোনো জায়গা থেকে চুয়ে উঠছিলো পানি। তুল তুল করছিল পুকুরের কাদাটে তল। সেই পুকুর এখন বিশাল জলাকার। কিনারের দিকে শাপলা ফুটে আছে। পদ্মপাতার ওপরে ভেসে আছে কত কত পদ্মফুল। মৌমাছি উড়ছে ফুলে। এই সাত সকালেও ব্যস্ত ওরা। মধু নেবে। আঁঠালো তরল অমৃতে সাজাবে ওদের সাদা সাদা মোমের খোপ। একটা এসে গুঞ্জন করতে লাগলো কানের কাছে। মাথা ঝাঁকালেন দীননাথ। কচা গাছের বেড়ার পাশে ধুতরা ফুলের দিকে উড়ে গেল মৌমাছিটা। এমন বিষময় ফলের ফুলেও মধু হয়! অবাক হলেন। পাড় থেকে জমাট ঘাস বিছিয়ে আছে বেড়া পর্যন্ত। একটা কচার ডাল দুমড়ে আছে। কষ গড়িয়ে পড়ছে ঘাসে। মনে পড়ল, ছেলেবেলায় কচার আঠার বুদবুদ বানিয়ে ফুঁ দিয়ে উড়াতেন। জিয়লের আঠায় এঁটে ঘুড়ি বানাতেন কাগজের। বাঁশের কঞ্চির ট্যাম-লাঠি খেলতে খেলতে সময় কীভাবে গড়িয়ে আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতে পারেন না। বাবার হাতের লাগানো হরিতকি, আমলকি আর লিচু গাছটা দেখতে দেখতে বাড়ীর দিকে আসতে লাগলেন। পাখিরা সেই কখন গান গেয়ে ক্লান্ত হয়ে আছে। ওড়াউড়ি করছে এগাছ থেকে ও-গাছে। গাব গাছটা লাগিয়েছিলেন নিজে বেশ ক’বছর আগে। এখনও ছোট-ই আছে। তবে ঝাঁকড়া হয়ে উঠেছে। কাছে গিয়ে দেখেন, সাত-আটটা স্বর্ণলতা সোনার তারের মতো শুয়ে আছে গাব-পাতার পরে। কী দারুণ স্বর্ণময়তার সবুজ আশ্রয় ওদের। সকাল বিকাল বাবার সাথে হাঁটতে বেরোলে কত রকমের গাছপালার কথা যে বলতেন বাবা। রূপকথার মতো ভালো লেগে গেলো এইসব বৃক্ষলতা, ওষধির অঙ্গন। বাড়ীর উঠোনে পা রাখলেন দীননাথ। মন্দিরে প্রথম পদ-স্পর্শের মতো মনে হলো। এই বাড়ী, এই ঘর-গৃহ আঙিনা, দহলিজ, তুলসি-তলা সবই বাবার হাতে গড়া। এই পৃথিবীতে এনে সবকিছু সাজিয়ে দিয়ে গেলেন। সাজানো বাড়ীতে কেমন জীবন যাপন করছে তাঁর প্রিয়তম পুত্র দীনু, দেখতে পেলেন না প্রাণভরে। হঠাৎ ক’রে একদিন ভোরবেলা শ্বাস নিতে পারছিলেন না। বুক চেপে হা ক’রে হাঁপাতে লাগলেন। পানি নিয়ে দৌঁড়ে এলেন মা। ঘুম থেকে উঠে এসে বাবার মাথাটা কোলের ওপর চেপে ধ’রে আকুল হয়ে তাকিয়ে ছিলেন চোখের গভীরে। বাবাও আপ্রাণ চেষ্টা করেও চোখ মেলে রাখতে পারলেন না। একটা হাত দীননাথের চোয়াল একটু ছুঁয়ে টুপ ক’রে পড়ে গেল। হেলে গেলো মাথাটা। কিছু বুঝতে পারলেন না। মনে হলো ঘুমিয়ে পড়েছেন বাবা। মা’র ডুকরে কেঁদে ওঠা শুনে পাথর হয়ে বসে রইলেন। অজান্তেই মানুষের চিকিৎসার ব্রত বুকে বাসা বেঁধে গেল তারপর। তুলসি তলায় দীননাথের স্ত্রী নন্দিনী আর ছেলের বউ অজন্তা ভজন গাইছেন। ওদের পাশে এসে দাঁড়ালেন। ভজন শেষ হলে চুপচাপ প্রণামে মাথা ঝুঁকে দাঁড়িয়ে রইলো সবাই। প্রতিদিনের মতো গীতা’র একটি শ্লোক পড়তে লাগলেন দীননাথ:  “জ্ঞেয়: স নিত্যসন্ন্যাসী যো ন দ্বেষ্টি ন কাঙ্ক্ষতি। নির্দ্বন্দ্বো হি মহাবাহো সুখং বন্ধাং প্রমুচ্যতে। সাংখ্যাযোগৌ পৃথগ্ বালা: প্রবদন্তি ন পণ্ডিতা:।  একমপ্যাস্থিত: সম্যগুভয়োর্বিন্দুতে ফলম্।  যৎ সাংখ্যৈ: প্রাপ্যতে স্থানং তদ্ যোগৈরপি গম্যতে।  একং সাংখ্যং চ যোগং চ য: পশ্যতি স পশ্যতি”  শ্বশুরের শ্লোক মন ভরে শোনে অজন্তা। পরম ভক্তিতে বুঁজে আসে চোখ। শেষ শব্দের প্রলম্ব রেশ কান আর প্রাণের গহীনে নিয়ে শ্রদ্ধাভরে তাকিয়ে শ্লোকের অর্থ বুঝিয়ে দিতে বলে। সতীনাথ জানেন, অজন্তার কাছে এর অর্থ অজানা নয়। বল্লার কেষ্ট সেনের মেয়ে ও। এমন মানুষের মেয়েকে ছেলের বউ করতে পেরে খুব খুশি হয়েছেন। কোনো শিক্ষায়ই কম রাখেন নি মেয়ের। মৃদু হেসে স্ত্রী আর বউমার দিকে ফিরে বললেন, “অর্জুনের প্রশ্নের জবাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সন্যাস ও কর্মযোগ সম্পর্কে উপদেশ দিচ্ছেন। বলছেন, যিনি আকাঙ্ক্ষা করেন না, রাগ হিংসা দ্বেষ পোষেন না মনে, সে-ই নিত্যসন্ন্যাসী। লোক, সংসার ছেড়ে কর্মত্যাগ করলেই সন্ন্যাসী হয় না। সংসার বজায় রেখে বিদ্বেষ ত্যাগ ক’রে নিষ্কামভাবে যিনি কর্ম সম্পাদন করতে পারেন তিনিই সন্ন্যাসী। যারা অজ্ঞ তারাই সন্ন্যাস ও কর্মযোগকে আলাদা ভাবে। যারা জ্ঞানী ও পণ্ডিত তারা এরকম বলেন না”। নন্দিনী আর অজন্তা চুপচাপ শুনে আরেকবার তুলসিকে প্রণাম ক’রে ঘরের দিকে গেলেন।  সকাল ন’টা থেকে রোগী দেখেন সতিনাথ। আলাদা কোনো চেম্বার বানাননি। দহলিজের বারান্দায় পাটি পেতে বসেন। প্রতিদিন সকালে ভাঁজ করা ধূতি আর পাঞ্জাবী এগিয়ে দেন নন্দিনী। কপালে চন্দনের টিকা দিয়ে দেন। শোবার ঘরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে স্থির হয়ে দেখেন। জপ-মালা হাতে পেঁচিয়ে দরোজার উপরে বাঁধানো বাল-কৃষ্ণ মুরারীর ছবিটার দিকে দু’হাত জোড় করে কপালে মালাটা ঠেকিয়ে বের হন। শোবার ঘরের পাশেই দহলিজ। কয়েক কদম পথ। তারপরও ঘর থেকে অফিসে যাবার মতো প্রস্তুত করেন নিজেকে। নন্দিনীকে একদিন কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, বুঝলে অনন্তর মা, আমার কবিরাজী বাড়ীতে হলেও কর্মক্ষেত্র পুরোপুরি নিয়মসিদ্ধ জ্ঞান করি আমি। রোগীদের সামনে যেমন-তেমনভাবে গেলে রোগ আরও প্রশ্রয় পায়। স্বামীর কথায় বরাবরের মতো মুগ্ধ হয়েছিলেন নন্দিনী।  উঠোনের কোণা থেকে রাস্তা পর্যন্ত গরুর গাড়ী, ভ্যান আর সাইকেলের সারি লম্বা হয়ে আছে। ছইয়ের ভেতর থেকে বিশ-একুশ বছরের একটা মেয়ে বের হলো। নীল জমিনের শাড়ীতে সকালের আলো ছেকে নীলাভ আভার ছায়া ফেলেছে মেয়েটার শ্যামলা সুগোল মুখে। ওর হাত ধ’রে আছে বছর চারেকের মেয়ে । হাত ছাড়াতে চাইছে। আঙুল মুচড়ে ছাড়িয়ে নিলো হাত। দহলিজের সামনের বকুল গাছটার নিচে দাড়ালো। লাফ দিয়ে দিয়ে পাতা ছেঁড়ার চেষ্টা করলো। পেছন থেকে মেয়েটার শ্বাশুড়ি বেরিয়ে এসে বাচ্চার হাত ধরলো। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো, চলো বউমা, কবিরাজ মশায় অপেক্ষা কইরতেছে।  রোগীদের আসতে দেখে প্রণামের হাত উঠিয়ে হাসিমুখে বসে আছেন সতিনাথ। নীল শাড়ী পরা মেয়েটাকে ইশারা করলো ওর শ্বাশুড়ি। পাটির ওপর বসলো ও। সাপের ফণার মতো খোলা আঙুল এগিয়ে এলো। হাত বাড়ালো মেয়েটা। হাত ধ’রে চোখ বুজলেন তিনি। ছোট ছোট কাগজে চিরকুটের মতো লিখলেন কিছু তারপর। চার পাঁচটা। পাশের বয়েম থেকে কয়েকরকম বটিকা কাগজে মুড়ে এগিয়ে দিলেন মেয়েটার দিকে। মেয়েটা মোড়া কাগজের ওপরের লেখাগুলো পড়লো—‘ একটি বটিকা নিম-পাতা রস মধুর সাথে সেব্য / সকাল বিকাল বাসি-পেটে’। লিখে দেবার পরও বুঝিয়ে বললেন ওষুধ কীভাবে খেতে হবে। দীননাথ পাশের মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনাদের তো আগে দেখিনি। কোথা থেকে আসা হলো? ‘আমাগের বাড়ি বল্লায়’। ইডা আমার বিটার বউ। বে হইয়েচে আজ দুইবচর, ছেইলে-পিলে হচ্চে না। ভালো কইরে ওষুদ দেন কবিরাজ সায়েপ, এটটা ছেইলো যোনো হয়’। দীননাথ হাসলেন। বললেন, আরে আপনারা তো আমার বিয়াই মশাইয়ের গ্রামের লোক। কেষ্ট সেন আমার বিয়াই হন।  ‘তা শুনিচি, আমার খুকা উনার কাচেই শুইনেচে আপনার কতা। আমার আর বউমা’র পাটায় দেলে, নিজি আইসলোনা লজ্জায়’। কথাগুলো ব’লে ঘোমটা টেনে দিলেন মহিলা। সাথের ছোট্ট ছেলেটার দিকে দেখিয়ে কবিরাজবাবু জানতে চাইলেন, এটা কে? মহিলা বললেন, ইডা আমার নাতী-ছেইলে, খুপ হনফইনে, খুপ চঞ্চল, শুদ্দু এদিক ওদিক হাঁটা দ্যায়।  শ্বাশুড়ির আঁচলের আড়ালে জড়োসড়ো হয়ে ব’সে আছে বউটা। নিজে স’রে গিয়ে বউমাকে এগিয়ে যেতে বললেন। হাত বাড়ালেন দীননাথ। বউমার অনিচ্ছুক হাতটা ধ’রে এগিয়ে দিলেন শ্বাশুড়ি। অর্ধেক মুখ ঘোমটায় ঢেকে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলো বউ। দীননাথ আঙুল রাখলেন কবজির নাড়ির নিচে। চোখ বন্ধ ক’রে রইলেন বেশ কিছুক্ষণ। চোখ খুলে ছোট্ট ক’রে বললেন, বিয়ের পরে দুই বছর বাচ্চা না হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। অনেক দেরী করেও হতে পারে। তোমার বয়স এখনও কম। চিন্তার কিছু নেই।  কাঠের খোপে খোপে রাখা কাচের বোয়েমগুলোর দিকে তাকালেন দীননাথ। সময় নিয়ে দু’তিন রকম বটিকা বের ক’রে আলাদা আলাদা কাগজে মোড়ালেন। শ্বাশুড়ির হাতে দিয়ে বললেন, প্রত্যেক সকালে খালি পেটে মধুর সাথে মিশিয়ে একটা বড়ি খাওয়াবেন। আর এই বড়িগুলো আপনার ছেলের জন্য। খাবার নিয়ম একই। একমাস পরে আপনার ছেলেকে দেখা করতে বলবেন আমার সাথে।  অন্যান্য রোগী দেখার ফাঁকে আজ কিছুটা আনমনা হয়ে উঠলেন। কত রকম রোগী আসে। কত কত উদ্বেগ তাদের। কোনোটা সত্যি কোনোটা অযথা। তবুও কারও কারও সান্ত্বনা-ওষুধ দিতে হয়। আশা বা অভয় বাণীর চেয়ে জীবনে বড় মহৌষধ আর কী হতে পারে। এই যেমন ছেলেপুলে না হওয়ায় শ্বাশুড়ির উৎকন্ঠা। কতই বা বয়স হবে মেয়েটার। বড়জোর সতের। খেলাধূলোর দিন এখনও সতেজ। মনের অজস্র স্বপ্ন লেগে আছে দৃষ্টিতে। চোখ যেখানে যায় মিহিন স্বপ্নের প্রলেপ বুলিয়ে যায় সেখানে। স্বামীর সোহাগ নেয়া শিখিয়ে নেয় বয়স। সন্তান পালনের বোধ আসে দেরিতে। দুপুরের খাবারের সময় পর্যন্ত রোগী দেখেন দীননাথ। নন্দিনী এসে দেখা দিয়ে যান দু’একবার। বলেন না কিছু। দীননাথ বুঝতে পারেন খাবার তৈরি। সামনের রোগীদের দেখা শেষ না হলে উঠেন না তবু। কখনও কখনও দুপুর গড়িয়ে যায়। নন্দিনী উঁকি দিয়ে দেখেন রোগীদের হাতের ওপর হাত রেখে চোখ বুঁজে আছেন তাঁর স্বামী । আয় রোজগারের উৎস মূলত এ নয়। তবে অগাধ সম্মান অর্জনে পরিতৃপ্তি আছে। শুধু দীঘড়ি গ্রাম নয়। আশেপাশের দু’দশ গ্রামে এক নামে চেনে সবাই নন্দিনীর স্বামীকে, তাদের পুরো পরিবারকে। কোথাও বেড়াতে গেলে কেউ মাসীমা, কেউ পিসিমা ডেকে যত্ন ক’রে বসিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তাঁকে নিয়ে। কী যে ভালো লাগে তখন নন্দিনীর। তিরিশ বছর হয়ে গেলো বউ হয়ে এসেছেন এই গ্রামে। বাপের বাড়ী দু’চার গ্রাম পরের সোনাকুড়ে। শুধু কাঁচা-পথ ছিলো সে সময়। গরুর গাড়ী ছাড়া আর কোনো বাহন ছিলো না আসা-যাওয়ার। এখন ইট বিছেয়েছে রাস্তায়। ভ্যান-রিকশা চলে।  নন্দিনী আবার এলেন। দীননাথ শেষ রোগীটা দেখে তাকালেন স্ত্রীর দিকে। হাসলেন দুজন। নন্দিনী বললেন, ভাত তরকারী নিয়ে বসে আছে বউ মা। হাত-মুখ ধুয়ে এসো।  রান্নাঘর থেকে খাবার এনে ওপাশের বারান্দার খাবার টেবিলে সব সাজিয়ে রাখে অজন্তা। প্রায় প্রতিদিন দুপুরে শ্বশুরের ভাত-তরকারী ঢেকে অপেক্ষা করে। দীননাথ বউমার সাথে ঘর-সংসারের প্রয়োজনীয় কথাবার্তা সেরে নেন এখানে। অজন্তা দাঁড়িয়ে এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে। মুখের নলা শেষ ক’রে দীননাথ জিজ্ঞেস করলেন, অনন্ত কী স্কুল থেকে ফিরেছে, বউ মা?  ‘না, বাবা। স্কুলে আজ মিটিং আছে। কমিটির সাথে। সব শিক্ষকদের থাকতে হবে। বাড়ী আসতে দেরী হবে ওর।  ‘দূর্গাপূজো এলো ব’লে। ও-পাড়ার বিকাশ বলছিলো পূজোর সাথে সাথে গান বাজনার আয়োজন করবে। মন্ডপের পাশে স্টেজ ক’রে সন্ধ্যার পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, তারপর নাটক। নাটকটা ও-ই লিখেছে। অনন্ত’র সাথে কথা বলতে চায়’।  ‘তাহলে তো এবারের পূজোয় আনন্দ হবে ভালোই। বাবাকে বলে দেব আমি আর এবার যাচ্ছি না। কেউ যেনো নিতে না আসে।  দীননাথ হাসলেন মনে মনে। সব মেয়েই বাপের বাড়ী যাবার জন্য পাগল। আর অজন্তা না যাবার বাহানা তালাশ করে। কতবার নিজে সাথে নিয়ে গিয়ে বেড়িয়ে এনেছেন বউমাকে। রেখে পর্যন্ত এসেছেন। থাক না ক’দিন বাবা-মা’র সাথে। তবুও চলে এসেছে তাড়াতাড়ি। প্রণাম করতে করতে হেসে বলেছে, আপনাদের ছেড়ে বেশিদিন থাকতে পারি না বাবা। দীননাথ বউমা’র মাথায় হাতখানা রেখে দিয়ে তাকিয়ে থাকেন নত মুখের দিকে। কতকিছু লেখা আছে প্রতিমার মতো এই মুখখানায়। অজান্তে কী এমন পূণ্য করেছেন তাই এমন মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে পেয়েছেন। নিজের মেয়েকে বিয়ে দেবার পর চোখের জল শুকোয়নি কোনোদিন। কেউ দেখতে পায়নি সেই অশ্রু। নন্দিনী শুধু জানে। মুখে বলেনি। রাতে বিছানায় পাশ ফিরে মেয়ের মুখ যখন মনে করছেন একদিন, চুলে বিলি কাটতে কাটতে নন্দিনী বলেছিলো, অলকার জন্যে কেঁদে কেঁদে তোমার চোখের জল শুকিয়েছে। কান্না ফুরোয়নি। অনন্তকে বিয়ে দাও গো। বউমা এলে অলকার ছায়া নড়তে চড়তে দেখবে আশেপাশে।  ‘মেয়ের অভাব কী কেউ পূরণ করতে পারে অনন্তর মা? পাশ না ফিরেই গমগমে স্বরে জবাব দিয়েছিলেন দীননাথ। শেষ শব্দে কন্ঠ ধ’রে এসেছিলো। স্বামীর চোখের পাতা মুছে দিয়েছিলেন নন্দিনী। সবার আশির্বাদে বউ হয়ে এসেছিলো অজন্তা একদিন।  ‘অলকাকে পূজোর সময় একটু আনার ব্যবস্থা করবেন বাবা?’ অজন্তার কথায় মুখটা সামান্য তুললেন দীননাথ। চোখ নামিয়ে তাকিয়ে থাকলেন মেঝের দিকে। ভেজা চোখ দেখাতে চান না বউমাকে। শ্বশুরকে চেনে অজন্তা। এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে কাঁধে হাত রেখে বললো, আমি অনন্তকে বলেছি বাবা, ও যেয়ে নিয়ে আসবে। সপ্তাহখানেক থেকে যাবে। নাটক দেখতে যাবো একসাথে। সন্তোষকেও নিয়ে আসবে সাথে। ‘আমি নিজে যেতে চাই বউমা, তুমি কি বলো?’ ‘তাহলে তো ও আরও বেশি খুশি হবে। তাই করেন বাবা, আপনিই নিয়ে আসেন’। এক নিশ্বাসে বললো অজন্তা। অজন্তার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। শ্বশুরের এই হাসি দেখতে বড়ো ভালো লাগে। অলকার কথা বললে এরকম উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তাঁর মুখ।  দূর্গাপূজার আর মাত্র দু’তিনদিন বাকী। দিন যত কাছে আসছে, দীননাথের চোখ-মুখ উজ্জ্বলতর হয়ে উঠছে। একটু পর পর হাত জোড় ক’রে উপরে উঠিয়ে ব’লে ওঠেন, দুগগা, দুগগা। আনন্দময়ীর আগমনের খুশি না-কি মেয়ে বাড়ী আসার আনন্দের প্লাবন বোঝা যায় না।  শনিবারে রোগী দেখেন না দীননাথ। এইদিন সকালে নেয়ে খেয়ে তৈরি হচ্ছেন। আনতে যাবেন অলকাকে। পরনে ধবধবে ধূতি। স্ত্রী করা সাদা পাঞ্জাবী পরেছেন। ধূতির আগা পকেটে পুরতে পুরতে হেসে তাকালেন নন্দিনীর দিকে। স্কুলে যাবার আগে ঘর থেকে বাবার সাইকেল বের ক’রে মুছছে অনন্ত। মিচকি হেসে উঠোনে দাঁড়ানো বাবা-মাকে দেখছে। অজন্তা ছুটোছুটি করছে। শ্বশুরের পানের ছোট কৌটো এনে এগিয়ে দিলো। দ্রুত অন্য পকেটে পুরে সাইকেলের দিকে গেলেন দীননাথ।  শারদীয় সকাল। বাড়ীর পাশের কাঁচাপথ পর্যন্ত সাইকেল হাঁটিয়ে নিয়ে গেলেন দীননাথ। চালানোর আগে তাকালেন পেছনে। অজন্তা আর নন্দিনী দাঁড়িয়ে আছে। হেসে হাত নাড়লেন। ওরাও হাসলো। ওদের হাসি মিশে রইলো এই সকালের স্বচ্ছ আলোয়। আকাশের দিকে তাকালেন। কাশফুলের মতো মেঘ উড়ছে। বিরল অথচ দৃশ্যমান। নীলের ছিদ্র সেইসব মেঘে। পাশের গাছপালা থেকে টি টি ক’রে উড়ে গেলো কিছু পাখি। মেঘের দূর থেকে শুনতে পেলেন হট্টিটি পাখির ডাক। একলা কেমন দ্রুত উড়ে গেল পাখিটা। মেঘের সাথে যেন বলতে যাচ্ছে ওর চিঠি ব’য়ে নেবার জন্যে। কালিদাস যেমন বলেছিলেন ‘মেঘদূতে’।  মাটির পথ ছেড়ে ইটের রাস্তায় উঠেছেন। রোদ ঝকঝকে হলেও বেশ সকাল আছে এখনও। রাস্তার পাশের ঘাস আর গুল্মলতা এখনও নরোম। ইটও খড়খড়ে হয়ে ওঠেনি। শিশির মেখে আছে মনে হয়। সামনের চাকাটা সামান্য পিছলে গেলো একবার। পা নামিয়ে সামলে নিলেন। সামনে তাকাতেই দেখলেন মহিউদ্দিন দাঁড়িয়ে আছেন রাস্তার পাশে। অনন্তর স্কুলের ধর্ম-শিক্ষক। পাশেই বাড়ী ওদের। দীননাথকে দেখে বললেন, আদাব, কবিরাজ বাবু। কোথায় চললেন, এত সকালে?’ ‘বল্লায় যাচ্ছি মহিউদ্দিন। মেয়েটাকে আনতে। পূজোর সময় একটু বেড়িয়ে যাক। ‘তা ভালোই হবে। অনন্তও তাই বলছিলো সেদিন, বোনকে আনার কথা। পূজো কবে থেকে শুরু হচ্ছে বাবু?’ ‘এই সোমবার থেকে। এবার নাটকও নাকি করবে ওরা। তা সময় হলে এসো একবার’। ‘ঠিক আছে, অনন্তর সাথে যাবো একদিন’  ‘এখন তাহলে আসি, মহিউদ্দিন।  ‘আচ্ছা কাকা, পরে কথা হবে, আদাব’।  উঠোনের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো অলকা। বাবাকে আসতে দেখে ছুটে আসলো। দু’পা দুদিকে দিয়ে দাঁড়ালেন দীননাথ। অলকা এসে জড়িয়ে ধরলো। মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন, কেমন আছিস মা?’ অলকা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললো, ভাল আছি বাবা, তুমি এমন শুকিয়েছো কেনো?’ দীননাথ হাসলেন। মায়ের কথা মনে পড়লো।  একহাতে সাইকেলের হ্যান্ডেল ধ’রে আর অন্যহাত মেয়ের কাঁধে রেখে বাড়ীর দিকে গেলেন দীননাথ। দুপুরে খেয়ে দেয়ে বিকেলে নিয়ে যাবেন মেয়েকে। মেয়ের বাড়ীর অন্ন-জল গ্রহণ করা না করার তর্কে যান না তিনি। মাঝে মাঝে কয়েকদিন থাকেনও। জামাই, সন্তোষের সাথে ঘুরতে যান বল্লা বাজারে। চুটিয়ে আড্ডা দেন চা-পানের দোকানে। সবাই খুব খুশি হয় কবিরাজ বাবুকে তাদের মাঝে পেয়ে। এ-ও তো তার গ্রাম। মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। তাঁর দেহের অংশ বাস করছে এইখানে। কী তফাৎ দীঘড়ি আর বল্লা’য়?। রোদ প’ড়ে এলে ভ্যান নিয়ে এলো সন্তোষ। শ্বশুরকে বললো, বাবা, আপনারা যান আমি সোমবারে আসবো। এইবার অলকা যতদিন ইচ্ছা থাকবে আপনার কাছে। দীননাথ জামাইর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। ভাবলেন, বেয়াই-বেয়াইন ওর নামটা ঠিকই রেখেছেন। জামাই যেমন দেখতে সুন্দর, স্বভাবও ভালো। আলাপ ব্যবহারে নিজের ছেলে আর সন্তোষের মধ্যে মাঝে মাঝে ধাঁধায় পড়ে যান।  স্বর্গ থেকে বাবা-মা’র আশির্বাদের ধারায় সিঞ্চিত হয়ে আছেন দীননাথ। জীবনের প্রতিটি সম্পর্ক রচনা কল্যাণকর হয়েছে তাঁর জন্যে। এক জীবনে মানুষের প্রাপ্তির প্রতুলতা হাতে গোণার মতো। তবে তাঁরটা অগণন। সারাক্ষণ যেন সুখ, সম্মান আর আলোকিত এক অনুভবে উদ্বেল থাকেন। গর্ব হয় এই দেশটাকে নিয়ে। ক’দিন পর পূজো। ঢাক ঢোলের ঝংকার, আনন্দ-মুখরতায় গীতময় হয়ে থাকবে চারপাশ। আজানের ধ্বনিতে থেমে যাবে ঢাকের কাঠি। শঙ্খ বেজে উঠবে নামাজের পর।  ভ্যান আগে আগে চলছে। টুক টুক ক’রে সাইকেল চালাচ্ছেন। ভ্যানের ওপর বসে আছে অলোকা আর সন্তোষের ছোটবোন সন্ধ্যা। বউদির ব্যাগে হাত রেখে বসেছে ও। পেছনে তাকাচ্ছে মাঝে মাঝে। অলোকা-ও তাকিয়ে দেখছে বাবাকে। চোখে চোখ পড়ছে কখনও কখনও। হাসি বিনিময় হচ্ছে বাবা-মেয়ের ভেতর। দীননাথ সাইকেলের গতির কাছে সঁপে দিয়েছেন নিজেকে। মনে হয় অলোকার ভ্যানের অদৃশ্য সুতো টেনে নিয়ে যাচ্ছে তাঁকে।  জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত বুকের গভীরেই রেখেছেন মেয়েকে। মা দূর্গা’র মতো কল্যাণময়ী হয়ে ছেয়ে আছে তাঁর জীবনে। অন্যের ঘরে দেবার প্রথা কেনো যে হলো। বাপের ঘর কি পর করার জন্যই আসে মেয়েরা? বাপের বুকের বেদনা উসকে দেয় কন্যার মায়াময় মুখ। এই দু:খ দেখেই কি পৃথিবীর সুখ? আজানের শব্দে সম্বিত ফিরে পেলেন দীননাথ। আসরের আজান হচ্ছে। তাকিয়ে দেখেন ঘোমটা টেনে দিচ্ছে অলোকা। মাথার ওপর ওড়না জড়ালো সন্ধ্যা।

Comments

Popular posts from this blog

India is on fire, 40,000 affected by heatstroke, 192 vagrants died in the summer in Delhi!

  দাবদাহে পুড়ছে ভারত, হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ৪০ হাজার, দিল্লিতে গরমে ১৯২ ভবঘুরের মৃত্যু! চলতি গ্রীষ্ম রেকর্ড গরমের সাক্ষী হয়েছে ভারত। দাবদাহের ভয়াবহতা চরমে পৌঁছেছে। দাউদাউ গরমে গত তিন দিনে কেবল দিল্লি, নয়ডাতেই ১৫ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।  এবার জানা গেল, গত সাড়ে তিন মাসে তপ্ত কড়াইয়ের ভারতে ৪০ হাজার মানুষ হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন!  অন্যদিকে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দাবি, ১১ থেকে ১৯ জুনের মধ্যে গরমে ১৯২ জন ভবঘুরের মৃত্যু হয়েছে রাজধানীতে।  এদিকে প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার সাক্ষী উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি। উত্তর ও মধ্য ভারত যখন বৃষ্টির অপেক্ষায় চাতক, তখন অসম-সহ একাধিক রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।  আবহ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এবার ভয়ংকরতম গ্রীষ্মের সাক্ষী গোটা এশিয়াই। ভারতের উত্তরাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে গড় তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রির আশপাশে থাকছে।  জলবায়ুর এই পরিবর্তনের জন্য দায়ী মানব সভ্যতা। আরও ভালো করে বললে ‘উন্নয়ন’। গত মার্চের পর থেকেই ক্রমশ অসহনীয় হয়েছে উঠেছে দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপামাত্রা।  সূর্যের লেলিহান উনুনে পুড়ে আকাশে উড়তে উড়তে বহু পাখির মৃত্যু হচ্...

আ.লীগই ক্ষমতায় আসছে: শেখ হাসিনা

আ.লীগই ক্ষমতায় আসছে: শেখ হাসিনা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট একেবারে দোড়গোড়ায়। বাকি আর মাত্র তিন দিন। দেশজুড়ে ভোটের উত্তেজনা। তবে এই উত্তেজনার মধ্যে নিশ্চিন্ত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে কলকাতার আনন্দবাজারকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, এবারও আওয়ামী লীগ জিতবে। বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে সুধাসদন ভবনে দেয়া ওই সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের জনগণের উপর আমার বিপুল আস্থা। তারা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। জনগনের ভোটেই আমরা আবার নির্বাচিত হব।’ এতটা নিশ্চিত কী ভাবে হচ্ছেন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রায় ৬০০ স্কুল পোড়ানোর কথা বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। মুছে যায়নি প্রিসাইডিং অফিসারসহ অজস্র নাগরিককে হত্যার স্মৃতি। রাস্তা কেটে মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সেই সময়ে জনগণই রুখে দাঁড়িয়েছিল। তারা ভোটও দিয়েছিল। সেই জনগণ আবার আমাদেরই ভোট দেবে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পরে দেশে একের পর এক সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সাধারণ মানুষ সে সব ভোলেনি। ভোলেনি বলেই ওই সব ঘটনা যে...

The Prime Minister handed over Ekushey Padak to 21 people

প্রধানমন্ত্রী একুশে পদক তুলে দিলেন ২১ জনের হাতে মহান একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ জনের হাতে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক তুলে দিয়েছেন।  মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তিরা এবং তাদের স্বজনদের হাতে একুশে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। এবার ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে মরণোত্তর একুশে পদক পেলেন দু’জন। এরা হলেন- মৌ. আশরাফুদ্দীন আহমদ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া (মরণোত্তর)  শিল্পকলার বিভিন্ন শ্রেণিতে ১১ জন পেলেন এই পদক।  সংগীতে পেলেন জালাল উদ্দীন খাঁ (মরণোত্তর), বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ, বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর) ও শুভ্র দেব।  অভিনয়ে অবদান রাখায় ডলি জহুর এবং এমএ আলমগীর, আবৃতিতে খান মো. মুস্তাফা ওয়ালীদ (শিমুল মুস্তাফা) এবং রূপা চক্রবর্তী, নৃত্যকলায় শিবলী মোহাম্মদ এবং চিত্রকলায় শাহজাহান আহমেদ বিকাশ।  মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিংয়ে কাওসার চৌধুরী, সমাজসেবায় মো. জিয়াউল হক ও আলহাজ...